ঢাকা, সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, রাত ৩:২৩
বাংলা বাংলা English English

হারিয়ে যাওয়ার ২১ বছর পর মায়ের কোলে ফিরলেন মতিউর


মানসিক অসুস্থ মতিউর রহমান ১৫ বছর বয়সে নিখোঁজ হন। এরপর থেকে পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করে। থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বাবা শহিদুল ইসলাম। অবশেষে ২১ বছর পর ভারত থেকে ছেলেকে ফেরত পেলেন বাবা-মা।

শুক্রবার (২১ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফেরেন মতিউরসহ ভারতের শ্রদ্ধা ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মী নিতীশ শর্মা এবং চিকিৎসক ডা. সারওয়ালি কে কোনডুউইলকার।

১৫ বছরের মতিউর এখন ৩৬ বছরের মধ্য বয়সি যুবক। মতিউর রহমান ঠাকুরগাঁও উপজেলা সদরের আখানগর ইউনিয়নের দেবীডাঙ্গা গ্রামের সহিদুল ইসলামের বড় ছেলে। ২০০২ সালে তিনি নিখোঁজ হন। পরিবারের ধারণা, আখানগর ইউনিয়নের কান্তিভিটা ধোনতলা সীমান্ত হয়ে ভারতের পাচির সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতের উত্তর দিনাজপুর যান।

২০১৯ সালের জুনে ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে মতিউরকে উদ্ধার করেন ভারতের ‘শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশন‍‍` এর সমাজকর্মীরা। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে মানসিক বিপর্যস্ত মতিউরের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাকে সিজোফ্রোনিয়া রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এরপর শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার মাধ্যমে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তিনি সুস্থ হন। সুস্থতার পর তার কাছেই পরিবারের পরিচয় জানতে পারেন ফাউন্ডেশনের কর্তাব্যক্তিরা।

এরপর সেখানকার সমাজকর্মী নীতিশ শর্মা বাংলাদেশে তার দুই বন্ধুর মাধ্যমে মতিউরের পরিবারের খোঁজ পান। তাদের সহযোগিতায় প্রথম ভিডিও কলের মাধ্যমে বাবা মাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন মতিউর। এরপর দুই দেশের আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফেরত আসেন। তাকে কাছে পেয়েই জড়িয়ে ধরেন বাবা মাসহ মতিউরের স্বজনরা। ২১ বছর পর ছেলেকে পেয়েই বুকে জড়িয়ে নেন মতিউরের বাবা-মা। সঙ্গে ছিলেন একমাত্র বোন সাইফুন নাহারসহ পরিবারের সদস্যরা। আনন্দে কেঁদে ফেলেন তারা।

দেশে ফিরে মতিউর রহমান রহমান বলেন, ‘আমি কখনোই ভাবতে পারিনি দেশে ফিরে মা বাবার কোলে আসতে পারবো। আমি অসুস্থ ছিলাম যারা আমাকে দেশে ফিরিয়ে দিলো আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

মতিউরের মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘খোদার কাছে সন্তানের জন্যে কেঁদেছিলাম খোদা আমার কথা শুনেছে

মতিউরের পিতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সন্তান হারানোর যে কষ্ট কত কঠিন তা সবাই বুঝতে পারবে না, আমার পরিবার সেই কষ্ট বুঝেছে। যারা আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিয়েছে আমি সারাজীবন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।’

ভারতের শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের মানসিক চিকিৎসক ডা. সারওয়ালি কে কোনডুউইলকার বলেন, ‘শুধু সেবা নয়, মানসিক সকল প্রেরণা দিয়ে মতিউরকে সুস্থ করে তুলতে পেরে আমরাও স্বার্থক।’

পঞ্চগড় বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘উভয় দেশের হাইকমিশনারদের নির্দেশে বিশেষ ব্যবস্থায় আমরা মতিউরকে গ্রহণ করেছি। আইনী সকল কর্মকাণ্ড শেষ করে আমরা তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করব।’

 

সব খবর